আলহাজ্ব অধ্যক্ষ শফিকুজ্জামান-
পরিবার নিয়ে এবারের চীন ভ্রমণটা ছিল ঠিক যেন কোনো রূপকথার গল্পের মতো। তবে পুরো ভ্রমণের সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল আমার দুই ছোট্ট মেয়ের অবারিত আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। ওদের চোখে চীন যেন ছিল বিস্ময়ভরা এক নতুন পৃথিবী।
ওদের আনন্দের কিছু মুহূর্ত:
গ্রেট ওয়ালে দাপাদাপি: চীনের মহাপ্রাচীরের বিশালতা দেখে ওরা তো অবাক! সেই উঁচু নিচু সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় ওদের ক্লান্তি ছিল না বললেই চলে। মনে হচ্ছিল ওরা যেন কোনো দুর্গের রাজকুমারী, যারা নিজেদের রাজ্য জয় করতে বেরিয়েছে।
পান্ডাদের সাথে মিতালী: চেলং বা সিচুয়ানের পান্ডা পার্কে যখন ওরা গোলগাল কিউট পান্ডাগুলোকে বাঁশ খেতে দেখল, ওদের চিৎকার আর হাসি থামানোই যাচ্ছিল না। "বাবা, দেখো পান্ডাটা ঠিক আমার মতো করে ঘুমাচ্ছে!"—ওদের এমন ছোট ছোট কথাগুলোই ভ্রমণের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ।
জিয়াংসুর পথে: এক টুকরো আনন্দ আর পরিবারের পুনর্মিলন
পরিবার নিয়ে এবারের চীন ভ্রমণটা ছিল অন্যরকম আবেগের। একদিকে বড় ছেলের সাথে দেখা করার আকুলতা, আর অন্যদিকে দুই মেয়ের প্রথমবার আকাশ ছোঁয়ার উন্মাদনা।
মেঘের রাজ্যে প্রথম ওড়া
বিমানের জানালায় মুখ ঠেকিয়ে আমার দুই মেয়ের সেই বিস্ময়ভরা চোখ দুটি ভোলার মতো নয়। যখন বিমানটি রানওয়ে ছেড়ে মেঘের ওপর দিয়ে ডানা মেলল, ওদের আনন্দ যেন আর ধরে না! "বাবা, আমরা কি তুলোর ওপর দিয়ে হাঁটছি?"—ওদের এমন সহজ সরল প্রশ্ন আর নিস্পাপ হাসিতে আমাদের পুরো যাত্রাটা ছিল আনন্দময়। নীল আকাশ আর মেঘের ভেলায় ভেসে চলা ঐ মুহূর্তগুলো ওদের শৈশবের সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে।
জিয়াংসু: যেখানে ইতিহাস আর আধুনিকতার মিলন
জিয়াংসু প্রদেশে পা রাখার পর আমাদের মূল আকর্ষণ ছিল বড় ছেলের ক্যাম্পাস এবং এখানকার অসাধারণ কিছু জায়গা। আমরা ঘুরেছি:
নানজিং (Nanjing): জিয়াংসুর রাজধানী নানজিংয়ের সান ইয়াত-সেন মেমোরিয়াল এবং প্রাচীন দেয়াল দেখে মেয়েরা অনেক রোমাঞ্চিত হয়েছে। এখানকার ইতিহাসের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিতে পেরে খুব ভালো লেগেছে।
সুঝৌ (Suzhou) - প্রাচ্যের ভেনিস: সুঝৌ-এর সেই বিখ্যাত ক্লাসিক্যাল গার্ডেন আর খালের ধারের সুন্দর দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল আমরা কোনো ছবির ভেতর দিয়ে হাঁটছি। নৌকায় চড়ে পুরো পরিবার মিলে ঘোরার সময়টুকু ছিল প্রশান্তির।
উশি (Wuxi): এখানকার বিশাল তাইহু লেক (Taihu Lake) এবং দানবীয় বুদ্ধ মূর্তি দেখে বাচ্চারা একদম অবাক হয়ে গিয়েছিল।
বড় ছেলের সাথে কাটানো সময়
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কঠিন পড়াশোনার ফাঁকে ছেলে যখন আমাদের সাথে যোগ দিল, তখন আমাদের পরিবারটি পূর্ণতা পেল। দুই বোন তাদের বড় ভাইকে কাছে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। ভাইয়ের ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো আর চীনের বিখ্যাত সব খাবার একসাথে বসে খাওয়া—এসবই ছিল আমাদের ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ অংশ।
পরিশেষে:
বাচ্চাদের সাথে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও, ওদের মুখের ঐ চওড়া হাসি আর কৌতূহলী চোখের চাহনি সব পরিশ্রম সার্থক করে দিয়েছে। চীনের আধুনিকতা আর ঐতিহ্যের মিশেলে আমার দুই মেয়ের এই আনন্দময় স্মৃতিগুলো আমাদের পরিবারের অ্যালবামে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে।







0 Comments