:
শাহজাদা আকন্দ জেলা প্রতিনিধি :নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চেয়ারম্যান মেম্বারের সিল স্বাক্ষর জাল করে ১৩ ‘রোহিঙ্গা’ নাগরিকের জন্মনিবন্ধন তৈরির অভিযোগে গ্রেফ তার মওদুদ আহমেদ শাওনের (৩৫) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। পরে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহনগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয় পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এরআগে গত বুধবার দুপুরে মোহনগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনের একটি দোকান থেকে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন করার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। পরদিন এ ঘটনায় মামলা হলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতার শাওন মোহনগঞ্জ পৌরশহরের টেংগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়নের উদ্যোক্তা। স্ত্রীর স্থলে অনলাইনের যাবতীয় কাজকর্ম করতেন শাওন। পুলিশ, স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা ও এলাকার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪-৫ বছর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে টেকনিশিয়ান পদে আবেদন করেন শাওন। চাকরি না হলেও তখন থেকেই ওই কার্যালয়ের সকল অনলাইন কাজকর্মের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) টিসিবি কার্ড সংযোজন ও যাচাই বাছাই সংক্রান্ত ওয়েব সাইট ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েব সাইটের পাসওয়ার্ডসহ সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন শাওন। ইউএনও কার্যালয়ে কাজের প্রভাব খাটিয়ে অন্য ৭ ইউনিয়নের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সকল কাজের নিয়ন্ত্রণও কব্জা করেন তিনি। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সিল স্বাক্ষর নকল করে অবৈধ জন্মনিবন্ধন তৈরির বাণিজ্য শুরু করেন। এতে দ্রুত তিনি কোটি টাকার মালিক বনে যান। উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের পাশেই এক দোকানে গাগলাজুর ইউনিয়নের উদ্যোক্তার কাজ করতেন শাওন। গত বুধবার ১৩ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন তৈরির অভিযোগে তার দোকানে অভিযান চালায় প্রশাসন। এসময় ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পাশাপাশি তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার ও স্মার্টফোন জব্দ করা হয়। পরদিন এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সচিব রাজীব মিয়া বাদী হয়ে শাওনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার দুপুরে শাওনকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আাদলত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে, এ ঘটনায় গত বুধবারই গাগলাজুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইমরান মিয়া ও সচিব রাজিব মিয়াকে শোকজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহনগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয় পাল বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। পহেলা জানুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমেনা খাতুন বলেন, আশা করছি, পুলিশের তদন্তে বিস্তারিত বের হয়ে আসবে। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান বলেন, বিষয়টি জেনে ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। জেলার আর কোথাও যেন কেউ এমন কাজ করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আমরা নজরদারি করব।





0 Comments